Breaking

Sunday, June 30, 2019

দায়িত্বের সংসার (সৌরভে সুবাসিনী ) পর্বঃ১



বিয়েটা হয়েই গেলো।হুহ্  আমিও বিবাহিত। আমারো এখন আলাদা ছোট্ট একটা সংসার হতো কিন্তু এসে পড়লাম বড় বোনের সতীন হয়ে। হ্যাঁ! বিয়ে টা তো হলো আমার বোন জামাই সায়ান মাহমুদ এর সাথে। যার সাথে ঠিক ছয় মাস আগে আমার বড় বোন অনামিকা ইসলামের সাথে হয়েছিলো। না আপু মরেনি। বেঁচেই আছে তবুও আমাকে তার সতীন হয়েই আজ থেকে এই সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে৷
.
পাঁচ মাস আগে যখন ভাইয়া - আপু ফ্যামিলি ট্রিপ থেকে ফিরছিলো তখন হঠাৎ এক্সিডেন্টে ভাইয়ার বাবা মা মারা যায়। আর আপু চলে যায় কোমায়। মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙেছে, মাথায় আঘাত লেগেছে।মা-বাবা কে হারিয়ে সায়ান ভাইয়ার পৃথিবীই তো অনামিকা আপু। সব ভালোই চলছিলো কিন্তু ওই যে কপালের লিখন। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো আপুর জন্য রাখা নার্স আপুর টেককেয়ার করেনি সেই মূল্য আমাকে আমার জীবন দিয়ে দিতে হলো।
.
.
কোন কালেই আমি আমার বাবার প্রিয় ছিলাম না। আমার জায়গায় ছেলে আশা করেছিলো তো তাই হয়তো আমাকে মেনে নিতে পারেনি। সেদিকে আপু তার চোখের মণি বড় মেয়ে৷
আপুর দেখাশোনা করার জন্য আমাকে তার সতীন করার কোন প্রয়োজন ছিলো কি না আমি জানি না। তবে বিগত পনেরো মিনিটে যতটা আন্দাজ করেছি তা হলো
১- আমাকে বিয়ে দিলে বাবার ঘাড়ের বোঝা কমবে।
২-সংসার টা নিজের মনে করে আগলে রাখবো। যদিও আমাকে বলা হয়েছে আপুর আমানত এসব।
.
আচ্ছা? আমিও তো এখন সায়ানের স্ত্রী তাহলে কি করে এসব আপুর আমানত হলো?.
৩- মেয়ের জামাই যদি পর নারীতে আসক্ত হয়ে যায়?  যদি আপুকে না রাখে তাই তার জন্য তার বেড পার্টনার দিয়ে গেলো।
.
আপু তো কোন একদিন সুস্থ হবে। সেদিন কি জবাব দিবে তারা? তার ভালোবাসার সংসারে কি আপু আমাকে মেনে নিবে?
.
.
ডায়েরি তে কথা গুলো লিখে আয়নার সামনে দাঁড়ালো অতসী। কিছুক্ষণ আগেই তার বিয়ে হয়েছে অথচ তার শরীরে নেই কোন হলুদের গন্ধ নেই কোন বিয়ের সাজ। চুপচাপ আয়নায় নিজেকে দেখছে সে।
গলার নিচে বেশ কালো হয়ে গেছে। কপালের বা পাশে ব্যান্ডেজ লাগানো৷ ঠোঁট কেটেছে।হাত, পায়ে কালশিটে।
.
ফোন টা নিয়ে গেছে ওর বাবা। তাইতো চাইলেও প্রিয় মানুষটা কে আর দেখতে পারবে না। তার ছবিও যে অতসীর জন্য অনেকটা সাহস জুগান দিতো।
এক হিসেবে ভালোই হয়েছে সে তো মুক্তি চেয়েছিলো আজ পেয়েও গেলো।
আচ্ছা সে কি জানে সে মুক্তি পেয়েছে?
.
দরজায় নক পড়ছে। সায়ান ভিতরে এলো। কেনো যেনো অতসী কে তার সহ্য হচ্ছে না। সায়ান প্রচন্ড ভালোবাসে অনামিকা কে। তাই তো তার জন্য বাধ্য হয়েই তার সতীন আনলো। হাহ্ সতীন?  এই মেয়েকে সায়ান চেয়েও দেখবে না। অনামিকা জীবন্ত লাশ হলেও ওকে নিয়ে সায়ান সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।
.
অতসী কে ডেকে সায়ান বললো
- দেখো অতসী!  আমি জানি তুমি মেনে নিতে পারছো আমাকে কিন্তু আমি তোমাকে মানতে পারবো না। আমার কাছে কখনো কোন অধিকার চাইবে না। তোমাকে বিয়েটা শুধু মাত্র অনার জন্য করা । তুমি অনার খেয়াল রাখবে এতেই হবে। তাছাড়া আর কোন কিছুই আমার থেকে আশা করবা না। এই বাসায় যথেষ্ট শালীন হয়ে চলবে। যখন তখন যেনো ওড়না ছাড়া না দেখি। আর হুম! এবার ছেলেদের পিছন ছাড়বে। তুমি এখন মিসেস সায়ান মাহমুদ। আশা করছি মাথায় রাখবে।
.
-ভাইয়া!  একটা কথা ছিলো
- বলো
-আসলে আমি টিউশনি করাতাম। মূলত আমার লেখাপড়া তাতেই চলতো৷
-তো?
-আমি আসলে একটু বের হতাম। সন্ধ্যের আগেই ফিরে আসবো।
.
.
সায়ান কোন কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ফিরে এসে অতসীর সামনে না অতসীর গায়ে টাকা ছুড়ে মারলো আর বললো
- নার্স কে আমি ২৫ হাজার দিয়ে রেখেছিলাম। এখানে ত্রিশ আছে। প্রতি মাসের এক তারিখে পেয়ে যাবে। কিন্তু মাইন্ড ইট অনার যত্নে যেনো ক্ষতি না হয়।
.
.
ঠোঁটের পাশে লেগে আবার একটু রক্ত আসলো। কষ্ট লাগছিলো কিন্তু প্রকাশ করে কি লাভ?  টাকাগুলো রেখে অনামিকার কাছে চলে এলো অতসী। আপুর সব টাইমটেবল কর‍তে হয়। লিকুইড খাবার দেওয়া হয়। অতসী খাবারের চার্ট দেখে খাবার বানিয়ে এনে খাইয়ে দিলো। হাত মুখ মুছিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে দিয়েছে।
অতসীর আপু খুব সুন্দরী তাই তো সায়ান ভাইয়াত মতো স্বামী পেয়েছে। দুজন দুজনের সমান সমান। রুপে, গুণে কিংবা শিক্ষায়।
আপুদের বিয়ে টা হলো ঘরোয়া ভাবেই। কথা ছিলো ট্রিপ থেকে ফিরে এসে বড় করে আয়োজন করবে কিন্তু তার আগেই সব ওলট পালট হয়ে গেছে।
.
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে 
অতসী ঘুমিয়ে গেছে তার খেয়াল নেই। কারণ সারাদিন না খাওয়া শরীরে টানছিলো না।
.
ঘুম যখন ভাঙলো তখন বুঝতে পারলো ও কোথাও থেকে পড়ে যাচ্ছে। কারো কথার শব্দ শুনতে পারছে।
.
-এই বেহায়া মেয়ে!  এত সাহস কি করে হয় আমার অনার পাশে ঘুমানোর? অনার জায়গা নিতে চাও?   এটা আমার আর অনার খাট। এই ঘরে তুমি আসবে কিন্তু অনার সংসারে ঢুকার চেষ্টা করবে না। সাহস কি করে হয় এই খাটে স্পর্শ করার?  এখানে অনা ব্যতীত অন্য কোন মেয়ের জায়গা নেই।
.
কথাগুলো বলে সায়ান জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। অতসীর হাত পা কাপছে। ঘুম ঘুম চোখে দরজার কাছে দু পা মুড়ে বসে অস্ফুটস্বরে ডেকে উঠলো
------মা!!!
.

চলবে
.


No comments:

Post a Comment