Breaking

Sunday, June 30, 2019

দায়িত্বের সংসারে (সৌরভে সুবাসিনী )পর্বঃ ২

 অতসীর মা মাগরিবের নামাজ পড়ে কেবল দুচোখ বন্ধ করেছিলো। হঠাৎ মনে হলো অতসী ডাকছে। চোখ খুলে দেখে মেয়ে তো নেই। থাকবেই বা কি করে?  মেয়ে তো অনামিকার বাসায়।

.
- অতসীর বাবা...  মেয়েটার একটু খোঁজ খবর....
.
-কত বার বলছি আমাকে অতসীর বাবা বলবা না?  বলছি না অনামিকার বাবা বলে ডাকতে?
- কেনো অনামিকার বাবা বলে ডাকবো?  অতসী আমার বড় সন্তান তাই অতসীর বাবা বলেই ডাকবো।
- অতসী না!  অনামিকা আমাদের সন্তান৷
-হ্যাঁ! মানছি অনামিকা আমাদের সন্তানের মতো। কিন্তু কেনো আপনি নিজের মেয়ের সাথে এমন করেন?  কোন দায়িত্ব তো পালন করলেন না। মেয়েটা কে কোন দিন আদর করে মা ডাক টাও ডাকলেন না। অথচ?
- অথচ কি?  তোর মেয়ের জন্মের সময় আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে ভুলে গেছিস?
-শোন অনামিকা আমাদের প্রথম সন্তান। ও আমাদের সন্তান আর কারো না। ওর থেকে প্রথম মা-বাবা ডাক শুনেছি। আর হ্যাঁ! আমার মেয়েটা পাঁচ মাস পর কোমা থেকে ফিরেছে কিন্তু প্যারালাইজড। সব শুনতে পাচ্ছে অথচ রেসপন্স দেখাচ্ছে না। সময় মতো দেখাবে। এখন ওর সেবা যত্নের প্রয়োজন তাই অতসীর ওখানে থাকা বেশি দরকার।
- মেয়েটার পরীক্ষা চলছে।
- তোর মেয়ে জজ হবে না ব্যারিস্টার?  যে এত পড়তে হবে?
- আপনি কি মানুষ?  অনামিকা কে তো....
- কোথায় কোথায় আমার মায়ের সাথে তোর অপয়ার তুলনা করবি না। ভুলে যাস না তোর ওই মেয়ে জন্মের সময় আমার অনামিকার মা কে খেয়েছে। আমার অনামিকা কে অনাথ করেছে৷ আমার থেকে আমার কলিজার টুকরা বোন কে কেড়ে নিয়েছে।
.
- এসব আপনি কি বলছেন?  ও কিভাবে নিবে?  সেদিন যা হয়েছিলো সব টা এক্সিডেন্ট মাত্র।
- কিন্তু সেদিন ওই মেয়ে জন্ম নিলো। অনামিকা কে অনাথ করে।
- নাহ্!  অনামিকা অনাথ হবে কেনো?  অনামিকা তো পেয়েছে মা-বাবা হিসেবে মামা-মামি কে কিন্তু আমার মেয়েটা জন্মের সাথে সাথে অনাথ হয়েছে।
- আমি অতসীর প্রতি দায়িত্বের অবহেলা করিনি।
-তাই বুঝি অনামিকার সতীন বানিয়ে রেখে এলেন?
- আমার অনামিকা মা সুস্থ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। দোয়া করো অনামিকা একটু একটু রেসপন্স করুক।
-অনামিকা সুস্থ হলে কি করবেন?  সায়ান-অতশীর ডিভোর্স দিবেন?  আমার মেয়েটার জীবন জীবন না?
.
.
আমিনুর ইসলাম  আর কথা বাড়ায় না। চলে যায়। তার কাছে উত্তর আছে কি নেই?  কিন্তু অনামিকা তার দায়িত্ব। তার বোনের শেষ অংশ। অনামিকার জন্য সে সব করবে। কখনো জানতে দিবে না অনামিকা তাদের সন্তান না। অনামিকা কে আগলে রাখবে সব টা দিয়ে।
.

.
ডক্টর এসে অনামিকা কে চেকাপ করছে। অনামিকার রেসপন্স খুব কম। ব্রেনের অনেকটা অংশ কাজ করছে খুব ধীরে। পাঁচ মাস কোমায় থাকার জন্য কি  হাত-পা খুব একটা নাড়াচ্ছে না?  কিন্তু সব বুঝা যাবে টেস্টের রিপোর্ট আসলে। অনামিকা কোমা থেকে বেরিয়েছে ৭দিন  কিন্তু অতসী মেয়েটা বেশ যত্ন করছে।
বুঝাই যায় মেয়েটা খুব ভালোবাসে বোন কে।  প্রতিদিন বোনের পাশে গিয়ে নিয়ম করে বসে থাকতো। সাত দিন আগে যখন অনামিকা প্রথম রেসপন্স করলো তখন সায়ান জেদ ধরলো বাসায় নিয়ে আসবে আর রাখবে না। কথা মতো তাই হলো কিন্তু আজ সকালে সায়ান অফিস যাওয়ার পর নার্স নিজের মতো বসে ফোনে কথা বলছিলো এদিকে অনামিকার শ্বাসটান উঠে খুব খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। এমনি তেই অনামিকার এজমার সমস্যা রয়েছে।
.
ভাগ্যিস সায়ান ফিরে আসে। তারপর খুব কষ্টে সব টা সামাল দেয় ডক্টর ইফাদ৷
.
.সায়ান -ইফাদ অনেক দিনের বন্ধু। স্কুল কলেজের গন্ডিকে এরা একত্রে পার করেছে। সায়ানের সব সিদ্ধান্তে ইফাদ সাহায্য করেছে। এমনকি অনামিকা কে পটানোর জন্য যা যা করা প্রয়োজন সব করেছে, ফ্যামিলি রাজি করানোর ক্ষেত্রেও ইফাদের অবদান অনেক কিন্তু আজ অতসীর সাথে যেটা হলো মেনে নিতে পারেনি ইফাদ। অনামিকার দেখাশুনা করার জন্য বিয়ে করার কি প্রয়োজন ছিলো?  তাছাড়া মেয়েটার জীবন কে অনিশ্চিত করার কি খুব প্রয়োজন ছিলো?  একদিন না একদিন অনামিকা সুস্থ হবে। তখন অতসীর কি হবে কারো কোন মাথা ব্যথা কি নেই এই বিষয়ে?  অবশ্য অতসীর বাবার আজ যে রুপ ইফাদ দেখেছে তাতে করে ইফাদ বুঝে গেছে আর যাই হোক এই মেয়ের প্রতি তার বাবার কোন দরদ নেই।এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কল এলো ইফাদের ফোনে । স্ক্রীনে সায়ানের নাম৷
.
-অনামিকার রিপোর্ট কোন নাগাদ পাওয়া যাবে?
-আসবে দু এক দিন পর। সায়ান তুই কি ফ্রি আছিস?
- হ্যাঁ।
-অতসী কে কেনো বিয়ে করলি?
- জানি না।
- জানি না মানে কি? তুই অন্তত মেয়েটা কে বিয়ে না করলেও পারতি।
- মানে?
-অতসী তো পালানোর চেষ্টাও করলো, পরিনাম দেখলি তো, যদি তুই একবার না করতি তাহলে তো বিয়ে হতো না।
-ও পালানোর চেষ্টা করলো বলেই তো বিয়েটা করলাম।
- মানে?
- যে মেয়ে আমরা সবাই থাকতে অনামিকা কে ছেড়ে পালাতে পারে সে মেয়ে আমার অজান্তেও পালাতে পারে।
- অতসী পালাচ্ছিলো কারণ ও বিয়ে করবে না বলে। মেয়েটার ভবিষ্যৎ শেষ করে দিলি।
-হুহ্!  ওর মনে তো লাড্ডু ফুটছে।
-মানে কি?
- অতসী বরাবর অনামিকা কে হিংসে করতো আর সবার সামনে এমন ভাব টা করতো যাতে করে মনে হয় কিছুই জানতো না। অনামিকার সব জিনিস ওর চাই এমন কি আমাকেও ওর চাই। তুই জানিস অতসী কতটা ক্যারেক্টারলেস মেয়ে?  কত ছেলের সাথে ওর চলাফেরা?   আমার সাথে অনামিকার বিয়ে ঠিক জেনেও আমাকে চাইতো। এমন কি অনামিকা কে ও ধমকিয়েছিলো ও যেকোন মূল্যেই আমাকে বিয়ে করবে।
.
- এসব তোকে কে বলেছে?  তুই নিজে দেখেছিস এমন কিছু?
-নাহ্! অনা এসব বলেছিলো।
- বাহ্! ভালো তো তাহলে বলতে হয় তুই অতসীর মনের ইচ্ছা পূরণ করলি!
-নাহ্!আমি ঠিক সে পরিমাণ কষ্ট ওকে দিবো যতটা অনামিকা কে অতসী দিয়েছে। যতটা অনামিকা কেঁদেছে ঠিক ততটা কাঁদাবো।
- তুই দিন দিন মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছিস.... যখন বুঝতে পারবি তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। হয়ে যাবে না অলরেডি হয়েছে। মেয়েটাকে পারলে মুক্তি দিয়েদে৷ এখনো সময় আছে।
.
সায়ান কোন কিছু বলে না। প্রতিশোধ তো সবে শুরু৷ অনামিকার প্রতিটি কষ্টের হিসেব তো অতসীকে দিতে হবে। তারপর না হয় মুক্তির কথা চিন্তা করা যাবে।
.
স্টাডিরুম থেকে বেরিয়ে বেডরুমে যাওয়ার সময় অতসীর রুম পড়লো। হুহ্ আজ তাদের বাসর রাত। অতসী কি তার জন্য অপেক্ষা করছে না কি?  সাত পাঁচ ভেবে অতসীর রুমে গেলো সায়ান। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে । নিস্পাপ লাগছে কিন্তু মিস অতসী তোমার এই চেহারার পিছনে যে এক জঘন্য ব্যক্তি লুকিয়ে আছে। যাকে সায়ান টেনে হিচড়ে বের করে আনবে। খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার তাই না আমার বউ হওয়ার । এজন্য তুমি এত জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছিলে।সেদিন তোমার জন্য আমার পরিবার শেষ করে দিয়েছো। তোমার জন্য আজ আমার এই অবস্থা। সব থেকেও নেই। তোমাকে তো আমি ছাড়বো না। তুমি কতটা অসহায় হতে যাচ্ছো তুমি নিজেও জানো না৷ অনামিকার প্রতি করা তোমার প্রতিটা অত্যাচারের হিসেব তুমি পাবে। আমার মা-বাবা কে খুন তুমিই করেছো। সেদিন যদি তুমি জঘন্য নাটক টা না করতে তাহলে আমি এত ডেস্পারেট হতাম না৷ এক্সিডেন্ট হতো না। অনামিকার মান-সম্মান নিয়ে খেলতে চেয়েছিলে না তুমি?  তোমাকে আমি মাঝ রাস্তায় বেইজ্জত করবো।

.

চলবে....
(কালকের গল্প নিয়ে অতশত কথা।  গল্প নিয়ে কোন এক্সপ্লেনেশন দিবো না। দিবো ইসলাম নিয়ে।
.
১- ইসলামে মেয়েদের টিপ পড়া নিষিদ্ধ। অথচ কাল প্রতিবাদ করা কন্যার প্রোফাইলে বড় করে টিপ দিয়ে প্রোফাইল পিকচার।
.
২- ইসলামে বিয়ের আগে  প্রেম,ভালোবাসা নিষিদ্ধ । প্রেম করে পালিয়ে বিয়েও নিষিদ্ধ। হাদীসে আছে -মহানবী (সা.) স্পষ্ট ভাবে ব্যখ্যা দিয়েছেন -যে নারী তার অভিভাবকের (মা, বাবা, কিংবা বড় ভাই,  মোট কথা অভিভাবক ব্যতীত) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার  বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল এবং তার বিয়ে বাতিল। (হাদিস টি তিরমিযি ( ১০২১) এবং অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ থেকে সংকলিত।
.
কখনো ওমন গল্পে তো কেউ কমেন্ট করলেন না ইসলাম বহির্ভূত।
.
৩- সিগারেট, তারপর alcohol এসব তো নিষিদ্ধ অথচ প্রতিদিন তো কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া হচ্ছে তাতে কিছু পরিমাণের হলেও alchol থাকে।
.
৪-বেড সিন দিয়ে গল্প শুরু, বেড সিন দিয়েই শেষ সে গল্প গুলো ইসলাম মেনে নেয়?
.
৫- নির্দিষ্ট পুরুষ ব্যতীত কারো সামনে যাওয়া নিষেধ। কতটা মানা হচ্ছে?
.
৬- যেকোন প্রকার গান বাজনা তো ইসলামে এক প্রকার নিষিদ্ধ কতটা মানছেন?
.
ওমন চাইলে হাজারো টা আমরাও তুলে ধরতে পারি। কিন্তু থাক না তর্কে যেতে চাচ্ছি না। গল্পটা কে গল্প হিসেবে পড়লে ভালো হতো না কি?  যাই হোক শুরুতে থেকে বোঝা যাচ্ছিলো যে অনেক কথা স্কিপ হচ্ছে অবশ্যই সামনে ক্লিয়ার হবে।
গল্প লিখার আগে অবশ্যই লেখিকা আমাদের সাথে বিষয় টা বলেই নিয়েছিলেন৷ এটা একটা প্রতিশোধ মূলক গল্প। ওহ হ্যাঁ আরো একটা কথা  , গল্প ভালো না লাগলে ইগ্নোর করবেন। বাজে মন্তব্য করবেন না। জায়েজ নাজায়েজ বলার আগে একবার ভেবে দেখুন আপনি যে সারাদিন নিউজফিডটা ঘুরে ঘুরে গল্প পড়ছেন তার মধ্যে কয়টা জায়েজ গল্প আছে?.
খারাপ লাগলে আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ কাল রাত থেকে আপনাদের কমেন্টেও আমরাও বিরক্ত।
আবার বলছি যাদের ভালো না লাগলে  ইগ্নোর করেন। অযথা ক্যাচাল ভাল্লাগেনা।

দায়িত্ব সংসারে প্রথম পর্ব লিংক
https://saurabhesuvashini.blogspot.com/2019/06/blog-post.html?m=1

No comments:

Post a Comment