Breaking

Monday, July 1, 2019

দায়িত্বের সংসার (সৌরভে_সুবাসিনী )পর্বঃ১৫


সকাল সকাল এত বড় সারপ্রাইজ আশা করেনি অতসী। মা এসেছে। প্রায় এক দেড় মাস পর দেখলো মা কে। জ্বরের কথা শুনে এসেছেন। সাথে রান্না করে নিয়ে এসেছে মেয়ের পছন্দের সব। অতসী বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। সায়ান শুধু তাকিয়ে দেখছে। হালকা কফি কালারের সুতি শাড়ি পড়া অতসীর চুল গুলো হাত খোপা করা। সামনের চুল গুলো গলার দুপাশে স্পর্শ করছে।


নাকে ছোট্ট ডায়মন্ডের নাকফুল ঠিক তিল থেকে দুই সেন্টিমিটার নিচে। ঠোঁটগুলো বার বার নড়ছে। বাম হাতের কনিষ্টার তিল বার বার টানছে সায়ান কে।
এক ধ্যানে বসে থাকা সায়ানের ঘোর কাটে অনামিকার বাবার কথায়। অতসী মায়ের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। অতসী এত কথা বলতে জানে?
খেতে খেতেই অতসী বিষম খায়।
.
-না খাবার না মা, দুজনের একজনেও কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে না। এত তাড়াহুড়ো করার কি আছে? সাবধানে খাওয়া যায় না? সব কিছুতেই তাড়াহুড়ো!
.
কথাগুলো বলতে বলতে সায়ান দ্রুত উঠে গিয়ে পানি এগিয়ে দেয়। পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অতসীর মা।
চোখ মুখে পানি এসে গেছে।কোন উত্তর না দিয়েই
নাক টানতে টানতে অতসী উঠে যায়। ওর মা পিছন পিছন যাচ্ছে।

অতসীর বাবা সায়ানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে সায়ান অতসীর প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এমন টা হলে অনামিকা যখন সুস্থ হবে তখন যদি সায়ান অতসী কে না ছাড়ে? অনামিকার তখন কি হবে? না! কিছু একটা করতে হবে। অনামিকা সুস্থ হোক আগে তারপর অতসী কে সে নিয়ে যাবে। অনামিকা কে জানতেই দিবে না অতসী সায়ানের বিয়ের কথা।
.
সময় বহমান। ঈশ্! কাছের মানুষগুলো যখন আশেপাশে থাকে তখন যদি ঘড়ির কাটা বন্ধ করে দেওয়া যেতো! কতই না ভালো হতো।
অতসীর বাবা আগেই চলে গিয়েছে নিচে। অতসী মায়ের থেকে বিদেয় নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যত দূর দেখা যাবে এখান থেকেই দেখবে। আর জীবনে দেখা হবেই না নাই। কে জানে?
.
চলতে চলতে অতসীর মা থেমে যায়। ব্যাগ থেকে একটা ল্যাপটপের ব্যাগ বের করে সায়ানের হাতে দেয়।
-আমার মেয়ে জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছে কিন্তু আফসোস পরিবার থেকে কিছুই পায়নি। খুব শখ করে গ্রাফিক্সের কাজ শিখেছে কিন্তু ল্যাপটপের কথা বাবাকে বলেও লাভ হয়নি। তখন তোমাদের এক্সিডেন্ট হলো। যদিও তোমাকে আমাদের এক পয়সা দিয়ে চালানো লাগে নি কিন্তু অনামিকার বাবা অতসীকে বকেছিলো। তার মায়ের এই বিপদের সময় অতসীর গ্রাফিক্সের কাজ শিখা, ল্যাপটপ কেনা একদম বেমানান ছিলো। তাই কিনে দেওয়া তো দূরে... থাক গে সেসব কথা। এইটুকু আমার
মেয়েটা তার অনেক শখ আহ্লাদ দুই চোখের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। টু শব্দটা করেনি। কিন্তু আমি তো মা! তাই ওর আমার কাছে করা প্রথম আর শেষ আবদার টা রাখলাম। তুমি প্লিজ ওকে এটা দিও৷
বাসায় তো থাকে এটা পেলে মন ভালো থাকবে। বলবে আমি দিলাম না কেনো? ওর নানুর হাতের বালা জুড়ো বিক্রি করে কিনেছি। মেনে নিতে পারবে না তো কারণ আমার মায়ের শেষ স্মৃতি ছিলো।
আরো একটা কথা! বাবা ওকে এত ওভাবে মেরো না। ওর মার খাওয়ার অভ্যেস আছে। কিন্তু মেয়ে মানুষ তো। যদি উঁচনিচ কিছু হয়ে যায়?আমার কথার কিছু মনে করো না। পারলে মেয়েটাকে পরীক্ষা দিতে দিও। ভালো থেকো বাবা।
.
ভদ্র মহিলা কথাগুলো বলে কালো ওড়নার কোণা দিয়ে চোখ মুছে হাটতে লাগলেন। পিছন ফিরে বার দুয়েক তাকালেন উপরে বারান্দায়। হয়তো অতসী দাঁড়িয়েছে সেখানে।
.
.
অতসীর মায়ের বলা কথাগুলো কানে বাজছিলো সায়ানের।
অনামিকা কি তবে তাকে ঠকিয়েছে? না কি মেয়েকে বাঁচাতেই উনি এসব কথা বলে গেলেন?
অতসী যদি সত্যি গ্রাফিক্সের কাজ কয়েকদিনে শিখে তাহলে ওসব কিভাবে?
.
অনামিকা না অতসী! কাকে বিশ্বাস করবে সায়ান? কে বাস্তব কে মরীচিকা? অতসীর বিরুদ্ধে সব প্রমাণ সায়ানের কাছে আছে অনামিকা কে অতসী কতো টা কষ্ট দিতো কিন্তু অতসীর ব্যবহার সব কিছু উল্টো প্রমাণ করছে। সায়ানের মাথায় প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। এক্সিডেন্টের পর থেকে কোন বিষয় নিয়ে টেনশন নিতে পারছে না সে।
না তার অতসী কে চাই। অতসীর ছোট্ট একটা হাসি যে কোটি টাকার সুখের থেকেও বেশি।
.
.
অনেকক্ষণ যাবত সায়ানের ফোন বেজেই চলেছে। অতসী পাশে হরর টিভি সিরিয়াল দেখছে। কালারস্ এ নতুন হরর টিভি সিরিয়াল শুরু হয়েছে "কবচ"। ভূতের প্রতি অতসীর টান বরাবর বেশি। মাঝেমধ্যে চিন্তা করে --- ঈশ্!আমার যদি একটা ভ্যাম্পায়ার বয়ফ্রেন্ড থাকতো।
.
নাহ্! সায়ানের ফোন বেজেই চলেছে। ওই খাম্বাটা কই গেছে? কল রিসিভ করে না কেনো?.
ব্রেক দেওয়াতে অতসী বাধ্য হয়ে কল পিক আপ করতেই ওপাশ থেকে বলতে থাকে
.
- সোনা পাখি কল রিসিভ করতে এতো সময় লাগে? ঘুমোচ্ছিলে না কি?
- আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া! আপনার বয়ফ্রেন্ড ভুলে ফোন বাসায় রেখে গেছে। আসলে বলবো।
-হোয়াট দি হেল অতসী! কি বলছো? আমি সায়ান।
- এহ্! আমি মনে করেছি আপনার কোন বয়ফ্রেন্ড।
- হোয়াইট কাইন্ড অফ ননসেন্স ইজ দিস? আর ইউ ম্যাড?
- আমি কি করে বুঝবো আপনি কল দিয়েছেন? স্ক্রীনে নাম উঠেছিলো My phone লিখা উঠছে। তো মনে করছি আপনার বফ কল দিছে। যেহেতু ছেলে কন্ঠ....
-উইল ইউ প্লিজ স্টপ!
-আচ্ছা!
-আমাকে দেখে তোমার ওমন মনে হয়?. আর ইউ থিংকিং নাটস্?
-না মানে!আপু ঘুমাচ্ছে, খাইয়ে দিয়েছি, নার্স আছে আর আমিও পালিয়ে যাই নি।
-আমি এসব জিজ্ঞেস করেছি?
-হয়তো করতেন তাই বললাম।
-তোমার রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার বলো
-মানে?
-রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার বুঝো না? ওইটা বলো প্লাস এডমিন রোল।
-ওসব বাবা বিয়ের দিন ছিড়ে ফেলেছে। আমার কাছে নেই।
-মনে তো আছে না কি? প্লিজ জলদি বলো।
-আচ্ছা!
- ধন্যবাদ।
-ফোন রেখে গেলে কল দিলেন কি দিয়ে?
- আমার ফোন কি একটা না কি?
- আমি জানি না কি?
-আচ্ছা রাখছি একটু ব্যস্ত আছি। দ্রুত আসবো। খেয়াল রেখো দুজনের।
.
.
অতসী কল কেটে দিয়ে বসে থাকে কিছু ক্ষণ। লোক না খাম্বা? কি মনে করে নিজেকে? আমি কি করে বুঝবো যে উনি কল দিছে? জীবনে কোন দিন আমার সাথে ফোনে কথা বলেছে? ফোন টাই বা রেখে যাওয়ার কি দরকার ছিলো? ভাল্লাগে না।
আল্লাহ্!তুমি একটা বিমান দেও আমি উড়ে উগান্ডা চলে যাই।
বিমানের কথা মনে হতেই দিহানের কথা মনে হয় অতসীর। দুচোখ পানিতে টলমল করছে। দৌড়ে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে দিহানের কাছে কিন্তু রাইমা কষ্ট পাবে।
আচ্ছা? আজ বাদে কাল যখন অনামিকা সুস্থ হবে তখন অতসীর কি হবে? কোথায় যাবে? বাবার বাড়ি? বাবা জায়গা দিবে তো?
.
.
.
ক্যাফেতে প্রায় আটচল্লিশ মিনিট যাবত অপেক্ষা করছে আফরিন। ইফাদের সময়ের জ্ঞান কি কোন দিন হবে না? এমনি তেও সারা সপ্তাহ দুজনেই ব্যস্ত থাকে। এই বুধবার বিকেলে দুজনের জন্য একটু ফ্রি সময় বের করে নেয়। অথচ গত এক মাস যাবত ইফাদ তাও দিতে পারছে না। এভাবে যে মেয়েটার কষ্ট হয় বুঝে না?
.
প্রিয় মানুষের সাথে দেখা করতে আসলে একটু সাজগোজ করে আসতে হয়।
হালকা কাজল, লিপস্টিক সাথে খোলা চুল। এসব লাগে সামনের মানুষকে স্পেশাল ফিল করানোর জন্য।
.
কথাটা ইফাদ একদিন আফরিন কে বলেছিলো যেদিন আফরিন একটু অগোছালো ভাবে চলে আসে।খুব লজ্জা লেগেছিলো। এরপর থেকে আফরিন ইফাদের সাথে দেখা করতে আসলেই শাড়ি পড়ে সেজে বের হয়। কিন্তু ইফাদ টা যে কই?
.
পাঁচ মিনিট পর ইফাদ আসে। এসে বসতে বসতেই বলে
-সরি সরি! দেরি হয়ে গেলো।
-কোথায় ছিলে?
-একটু কাজে
-কি কাজ?
- অতসীর এডমিট.......
.
কথা টা শেষ করতে দেয় না আফরিন। অতসী নাম টা যেনো এতক্ষণের অভিমানের উপর ঘি ঢেলে দিলো।
-আবার ওই মেয়ে! আচ্ছা? ওই মেয়ে ছাড়া কি আর কোন কাজ নেই তোমার?
-মানে?
-মানে কি বুঝো না? আমার সময় হয় না। অথচ ওই মেয়ের জন্য এত কিসের আদিক্ষেতা? কি সম্পর্ক তোমাদের.?
- তুমি জানো ও আমার ছোট বোনের মতো। তারপরও? তুমি রেগে আছো! নাও পানি খাও।
- পানি মাই ফুট। আর ইউ থিংক আ'ম এ লিটল গার্ল? নো মি. ইফাদ চৌধুরী!
- আফরিন রিল্যাক্স ডিয়ার।
- শোন! মায়ের পেটের বোন ছাড়া অন্য কেউ কোন দিন বোন হতে পারে না। আর ওই মেয়েতো আরো না। যে মেয়ে নিজের বোনেত সতীন হতে পারে সে আর যাই হোক কারো বোন হতে পারে না। না কি তুমি ওকে রক্ষীতা হিসেবে রাখতে চাচ্ছো?.
-এনাফ আফরিন! এতক্ষণ অনেক বলেছো। আর না। তুমি সব জানার পরেও এভাবে বলতে পারলে?
-আজ ডিসাইড করো অতসী না আফরিন।
-যদি বলি অতসী?
-তাহলে আজকেই আমাদের শেষ দেখা। আমাদের মাঝে সব শেষ হয়ে যাবে।
-আমি অতসী কেই বেছে নিবো।
-ইফাদ!
-হ্যাঁ! তোমার মতো আফরিন আমার লাইফে অনেক আসবে ইফতি কে হারিয়ে আমি অতসী কে পেয়েছি আমি ওকে ছাড়তে পারবো না। ভালো থেকো আমার ভালোবাসা।
.
.
ইফাদ চোখের পানি মুছে বেরিয়ে আসে। আফরিন এখনো বসে আছে। এভাবে ইফাদ একটা রাস্তার মেয়ের জন্য ওকে ছেড়ে দিলো? অপর দিকে ইফাদ ভাবছে -মেয়েটার জন্মই হয়তো আজন্ম পাপ হয়ে গেছে। কেউ তোকে স্বাভাবিক ভাবে নিতেই পারে না রে বোন। কিন্তু চিন্তা করিস না! তোর এই ভাই তোর জন্য যেকোন কিছু করতে সব সময় প্রস্তুত।
.
.
চলবে

No comments:

Post a Comment