Breaking

Monday, July 1, 2019

দায়িত্বের সংসারে (সৌরভে সুবাসিনী) পর্বঃ৩ Dayiter Sansare Part 03

বিয়ের পর দিন

 মেয়েদের জীবনে সকাল টা হয় অনেকটা মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ সকাল।স্বামী,সংসারে প্রথম সকাল। নতুন জীবনের নতুন অধ্যায়। কিন্তু অতসীর জন্য এমন কিছুই নেই। অনামিকার সংসার, অনামিকার স্বামী। সম্পর্কে সে তার সতীন হলেও অতসীর কোন জায়গা হয়তো এই সংসারে হবে না।
আফসোস নেই। যার বাবার সংসারেই সে ছিলো না থাকার মতো এটা তো আবার তার বাবার আদরের মেয়ের সংসার।
মাঝেমধ্যে অতসীর মনে হয় সে তার বাবার মেয়ে না। না হলে তার বাবা তার সাথে এতটা খারাপ কিছু করতো না৷
ছোট বেলায় অনামিকা হয়তো সত্য বলতো -অতসী কে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলো। প্রথমে বিশ্বাস করতো না কিন্তু যখন থেকে ওর বাবাও রাস্তার মেয়ে বলে ডাকতো তখন থেকে অতসী নিজেও মনে করে হয়তো তাকে সত্যি রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে।

সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো অতশীর। ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে তার চা খাওয়া খুব দরকার মেয়েটা খুব চা-খোর। 
চা বানিয়ে রুমে যেতেই সায়ানের ডাক পড়লো। কয়েক চুমুক সবে নিয়েছে  কিন্তু সায়ানের চিল্লানিতে আর চা! 

ষাড়ের মতো চেচাচ্ছেন কেনো?
কি বললা?
না মানে ডাকছিলেন কেনো?
 তোমাকে এমনি এমনি মাসে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে রাখিনি যাও অনাকে ফ্রেশ করো।

অতসী কোন উত্তর দেয় না। চুপচাপ অনামিকা কে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দিয়ে আসে।
সায়ান স্টাডিরুমে বসে বসে সব দেখছিলো। অতসী কে সে বিশ্বাস করেনা। তাই কাল রাতেই সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে পুরো রুমে। অতসী অনামিকার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করলে ওকে শেষ করে দিবে।
অতসী যখন অনামিকার পা মুছিয়ে দিচ্ছিলো তখন সায়ান হাসতে থাকে। বিদ্রুপের হাসি৷ ডুব দেয় অতীতে

কল দেওয়ার পর অনেকক্ষণ যাবত কান্না করছে অনামিকা। ওর প্রতিটি নাকটান দিয়ে কান্নারসুর যেনো তীরের মতো বিধছে।

অনা?  কি হয়েছে?
কিছু না।
 কাঁদছো কেনো?
কাঁদছি না তো।
আমি বুঝি তো। কেউ কিছু বলেছে? 

এবার অনামিকার কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। ফুপাতে ফুপাতে বললো

অতসী বাসার কোন কাজ করে না, সব কাজ আমি করি। আজ একটু পানি আনতে বলেছি বলে  ও আমাকে যা ইচ্ছা বলে গালি দিলো। আর জানো কি বললো?
কি? 
আমাকে না কি সারাজীবন ওর দাসীবান্দি হয়ে থাকতে হবে। ওর বাসায় কাজ করে খেতে হবে।

কথা বলেই আবার কাঁদতে থাকে অনামিকা৷ সায়ানের প্রচন্ড রাগ সেদিন উঠলেও কিছু কর‍তে পারেনি কিন্তু আজ মিস অতসী কে সে অনামিকার দেখাশুনা করার জন্যই রেখেছে। যে অনামিকার কাজের লোক ব্যতীত কিছুই নয়।অনামিকা বুঝতে না পারলেও অনুভব তো করতে পারবে?

ঘোর কাটলো ফোন কলে। সায়ানের ফ্রেন্ড আরহান কল দিয়েছে। পেশায় সে এডভোকেট। সায়ানের লিগ্যাল এডাভাইজারো বলা যেতে পারে।

সায়ান!  তুই কি সিউর?
হ্যাঁ!
কিন্তু এতে অতসীর লাইফ রিস্কে পড়তে পারে।
আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট হার। আই জাস্ট ওয়ান্ট দ্যাট ম্যান।
ভেবে বলিস। আজ থেকে অতসী তোর নামে পরিচিত হবে যেখানে অনামিকার পরিচয় ঠুনকো নয় বলতে গেলে অস্তিত্ব নেই। কারণ কেউ কিন্তু জানে না যে অতসী না অনামিকা তোর প্রথম স্ত্রী। আর এটা যদিহয় যে এক্সিডেন্ট টা তোর বিজনেস রাইভালদের মধ্যে কেউ করেছে তাহলে কিন্তু অতসী হবে ওদের নেক্সট...
 আমি এটাই চাইছি। ওরা নেক্সট মুভ দিক। কেনোনা এতেই এর পিছনে কে আছে বেরিয়ে আসবে।
তুই  অতসী কে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছিস। মেয়েটার লাইফের একটা মূল্য আছে৷ যদি ওর কিছু হয়?
অনার থেকে এট্যাকার দের দূরে রাখার এর থেকে ভালো কোন উপায় আমি এখন আর দেখছি না।
 যা ভালো বুঝিস কর।

সায়ান অনামিকার বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হয়। আগেই কাউকে জানায় নি। কারণ বিজনেস ট্রিপ ছিলো। সায়ান চেয়েছিলো ফিরে এসে বিয়ে করবে বেশ ধুমধামে কিন্তু অতসীর অত্যাচারে অনামিকা প্রায়ই মন খারাপ করে থাকতো। সায়ান বুঝতো না কেনো অনামিকা এসব সহ্য করে। ওর বাবা কে জানালেই তো অতসী ওকে জ্বালাতে পারে না কিন্তু অনামিকা ওর বাবা কে জানাতে নারাজ। এদিকে অনামিকার মন খারাপ দেখে কোন মতে বিয়ে করে ওকে নিয়েই সায়ান বিজনেস ট্রিপে। সাথে সায়ানের বাবা -মা ছিলো।। কারণ সায়ান ছিলো একমাত্র সন্তান আর ওর বাবা ওর মা কে ছাড়া কোথাও যেতো না।

দিন গুলো বেশ ভালোই কাটছিলো। স্বপ্নের মুহূর্ত ছিলো। অনামিকার হাসি খুশি চেহারা, মা-বাবা। সব মিলিয়ে সময় টা সায়ানের জন্য অমূল্য।
কিন্তু....
কিন্তু অতসীর জন্য সব শেষ হয়ে গেলো। অতসী, অতসী, অতসী...  এই মেয়েকে সায়ান ছাড়বে না। কোন দিন না।

অতসী?  এই অতসী?.
জ্বী বলুন?
এক কাপ চা দাও। পাঁচ মিনিটের মধ্যে

সাত মিনিটের মাথায় অতসী চা নিয়ে দাঁড়ায় সায়ানের সামনে।
মুচকি হেসে সায়ান চায়ের কাপ হাতে নেয়। অন্য হাতে অতসীর হাত ধরে হেটে বেসিনের সামনে নিয়ে গিয়ে ওর বাম হাতে পুরো এক কাপ গরম চা ঢেলে দেয়।
অতসী চিৎকার করতে নিলে বলে
ভুলেও চিৎকার করবে না। অনা ঘুমে।

অতসী দাতে দাত চেপে সহ্য করে। চোখ দিয়ে পানি তো পড়ছেই। সায়ান অতশীর কানের কাছে গিয়ে ধীরেধীরে বলে....
 যার বউ হওয়ার জন্য এত কাঠখোট্টা করলে তার সম্পর্কে এটা জানোনা যে সে চা না কফি পছন্দ করে? কফি চাই। পাঁচ মিনিট সময়। না হলে আবার এমন হবে মাইন্ড ইট মিস অতসী।

অতসী চুপচাপ চলে গেলো। সায়ান রুমে এসে থম মেরে বসে গেছে। অতসীর কাছে যেতেই ওমন কেনো ফিল হলো?  মেয়ের চুলে তো মারাত্মক স্মেল। কি দেয় চুলে?  আর এত লম্বা চুল?  বরাবরই সায়ানের লম্বাচুল পছন্দ হলেও অনামিকার চুল এত বড় রাখতো না। গরমের কারণে। উফফফ কি সব ভাবছে? 
দ্রুত ফোন বের করে ম্যানেজার কে কল দিয়ে আজকের পার্টি সম্পর্কে সব কাজ দেখে নিতে বললো। আজ সে মিসেস সায়ান মাহমুদ হিসেবে অতসী কে পরিচয় করিয়ে দিবে৷ অতসী হয়তো চিন্তাও করতে পারবেনা যে পরিচয় সে এতদিন পেতে চেয়েছিলো সে পরিচয় পেয়ে ও ওর জীবনে কতটা বিপদ ডেকে আনছে। কথা গুলো ভেবে বিদ্রুপের হাসি হাসতে হাসতে পিছনের দিকে ঘুরতেই সায়ানের মনে হলো কেউ ওর দিকে গরম কিছু একটা ছুড়ে মেরেছে। উফ গলার দিকে, বুকে জ্বলে যাচ্ছে। চোখ গরম করে সামনে তাকাতেই দেখে অতসী দাঁড়িয়ে আছে। যার হাতে কফির মগ। তার মানে অতসী গরম কফি সায়ান কে ছুড়ে মেরেছে। এত সাহস কি করে হয় ওর?  কিছু বলার আগেই অতসী বা হাতের তর্জনী নাড়িয়ে বললো....
 মি. সায়ান মাহমুদ। ভুলেও আমাকে এতটা অবলা নারী ভাববেন না। আমি স্টার জলসার কোন সিরিয়ালের নায়িকা নই যে আপনি অত্যাচার করবেন আর আমি সহ্য করবো। মনে রাখবেন আপনি যদি বুনো ওল হয়ে থাকেন তাহলে আমিও বাঘা তেতুল।

চলবে....

No comments:

Post a Comment