বার বার ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু রাইমার জন্য সে আজ এখানে বাধা পড়েছে।
মনে মনে আওড়াচ্ছে দিহানের নাম। বাথটাবের পাশে বসে পড়ে অতসী।
কেনো সেরাতে দিহান কে সে ফিরিয়ে দিয়েছিলো? যদি না ফিরাতো তাহলে হয়তো আজ দিহান অতসীর সাথে থাকতো।
.
অতসীর চাপা কান্নার স্বর ঠিক সায়ানের কানে পৌঁছে যায়। সায়ান ডাক দিতে যেয়েও পারে না। অধিকার কি সত্যি আছে? জোড় করে বিয়ে করলেও অতসীর মন অবধি পৌঁছাতে সে পারছে না।
এদিকে অতসী দিহানের নাম নিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে৷
.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক বলেছিলেন
.
পৃথিবীতে বালিকার প্রথম প্রেমেরমত সর্বগ্রাসী প্রেম আর কিছুই নাই। প্রথমযৌবনে বালিকা যাকে ভালোবাসে তাহার মত সৌভাগ্যবানও আর কেহই নাই। যদিও সে প্রেম অধিকাংশ সময় অপ্রকাশিত থেকে যায়, কিন্তু সে প্রেমের আগুন সব বালিকাকে সারাজীবন পোড়ায়।
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর অতসী বেরিয়ে আসে। শাড়ী বেশ ভিজে গেছে। সায়ান তখনো বিছানায়। আবার শাড়ি নিয়ে চেঞ্জ করে বেরিয়ে যায় রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে।
.
অতসী তেমন কিছু খেতে পারেনা তাই তার মা বেশ ঝাল দিয়ে বাদামের মরিচ বাটা, কালো জিরার মরিচ বাটা, তিলের মরিচ বাটা সহ আরো অনেক কিছুই নিয়ে এসেছিলো। অতসী ভাত, আলু ভর্তা, ডিম ভাজি করছিলো। যদিও কাজের লোক আছে তবুও অতসী নিজে করতেই পছন্দ করে৷
.
.
-কি করছো?.
.
সায়ানের হঠাৎ এমন প্রশ্নে অতসী চমকে যায়।
- খাবারে বিষ দিচ্ছি। লেমন ফ্লেবার। চলবে?
-চলবে না দৌড়াবে। আচ্ছা মেনু কি?.
- আপনি এসব খাবেন না। আপনার জন্য হাবিজাবি আছে।
-বলো তো
.
অতসীর মেনু শুনে হেসে বললো
ইফাদের এসব বেশ পছন্দ। তুমি কি ইফাদ কে আসতে বলবে?
.
কথা শেষ হতেই ফোন এগিয়ে দেয় অতসীর দিকে। অতসী সানন্দে ফোন হাতে নিয়ে
কথা বলা শুরু করে৷ ইফাদের বাসা একই ব্লকে হওয়ায় ইফাদ আসবে৷
অতসী দ্রুত সব তৈরি করে টেবিলে রাখতে রাখতেই ইফাদ চলে আসে।
চেহারায় বেশ ক্লান্তি৷ বিকেলে আফরিনের ব্যবহারে সে বেশ বিরক্ত আছে। এত দিনের সম্পর্ক ওদের। কিভাবে আফরিন এসব বললো? সব জানার পরেও? যখন ওর ভাই এমন একটা পরিস্থিতি দিয়ে যাচ্ছিলো তখন ভাইয়ের বড় সাপোর্ট ছিলো সে নিজে। আজ অতসীর সাপোর্ট ইফাদ হলেই বা সমস্যা কোথায়?
এসব ভাবতে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ইফাদ৷
.
রান্নাঘর থেকে অতসীর একটু চিৎকার শোনা গেলো। সায়ান, ইফাদ দুজনেই ছুটলো সেদিকে৷
ডান হাত রক্তে মাখামাখি। বৃদ্ধাংগুলি বেশ ভালোই কেটেছে। পাশে রাখা আধ কাটা লেবু দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে লেবু কাটতে গিয়েই এমন টা হয়েছে। সায়ান দুহাতে আকড়ে আছে অতসীর পিচ্চি আংগুল টা৷ ইফাদ ছাড়িয়ে নেয় কারণ সায়ান যেভাবে চাপ দিচ্ছে ব্লাড আরো বেশি আসছে।
.
ইফাদ ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশ করে ব্যান্ডিজ করে দেয়। তারপর নিজেরা ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে। অতসী খাবার সার্ভ করলেও কিভাবে খাবে?
ঈশ্! আলুভর্তা ভাত কি আর চামচ দিয়ে খেয়ে শান্তি আছে?
.
অতসীর এমন চেহারা দেখে সায়ানের বেশ হাসি পায়৷ ওর পাশের চেয়ারে ওকে বসিয়ে ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে দেয়।
অতসী বেশ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ।
সামনে ইফাদ দাদা ভাই। সে কি মনে করবে?
সায়ান যেনো অতসীর মনের কথা বুঝে।
.
-ইফাদ কে লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই। চুপচাপ খেয়ে নাও।
.
প্রচন্ড ক্ষুধা লাগায় অতসী চুপচাপ মুখে তুলে নেয়। সায়ান অতসীর মুখে পুরো লুকমা ভাত দিচ্ছে না। হাফ ওর জন্য রাখছে। অতসীর হঠাৎ করে মায়ের বলা কথাটা মনে পড়ে গেলো
.
-যে স্বামী নিজ স্ত্রীকে
এক লোকমা ভাত খাইয়ে দিবে, আল্লাহ ঐ স্বামীর ছগীরা গুনাহ গুলো মাফ করে দিবেন।
.
অতসী মন বা মস্তিষ্ক কি চাইছে? অতসীর অবচেতন মন সায়ান কে স্বামী হিসেবে মানছে কিন্তু অতসীর মস্তিষ্ক দিহানের কথা ভাবছে। নিজেকেই নিজের মাঝে গুলিয়ে ফেলছে অতসী৷ এসব ভাবতে পারে না সে।
.
.
.
ইফাদ একটা ফাইল এগিয়ে দিলো অতসীর দিকে। ঈশারা করলো অতসী যেনো খুলে দেখে।
ফাইল খুলে অতসীর চোখ ছানাবড়া। এডমিন, রেজিষ্ট্রেশন কার্ড!
জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আছে অতসী। মুচকি হেসে মাথায় হাত রাখে।
.
-এক্সামের প্রিপারেশন নিয়ে নাও। কাল দিন আছে শুধু।
.
অতসীর হাত পা কাপছে। চোখ দিয়ে পানি এসে গেছে। মায়ের পর যদি কারো থেকে এমন স্নেহ পেয়েছে সে হলো ইফাদ৷
ইফাদ আবার একটা ল্যাপটপ এগিয়ে দিলো।
যদিও এসব সায়ান নিজে বলেছে ইফাদ কে দিতে কারণ অতসী হয়তো তার হাত থেকে নাও নিতে পারতো৷ তাইতো সায়ান ইফাদের হাত দিয়ে সব অতসী কে দিলো।
অতসী চুপচাপ হয়ে আছে।
ইফাদ অতসীর পাশে বসে বলতে থাকলো
.
-আপু! এক্সাম দিবি না?
-দাদাভাই! কিছুই তো পারি না। তাছাড়া বই.....
-সব আমি নিয়ে এসেছি। আচ্ছা কোন মতে এটেন্ড করো পরে সাপ্লি দিও? আমি কি আসবো তোমায় নিতে?
.
.
সায়ান এদের মাঝে কথা বলে উঠে।
-আমি নিয়ে যাবো। তাছাড়া বড়মা যেতে বলছিলো।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কাল আসবো। এবার আপু তুই পড় আমি আসি।
.
ইফাদ চলে যায়। সায়ান এসে অতসীর পাশে বসে আরো দুটো বক্স এগিয়ে দেয়৷
একটা তে মাউস অন্যটায় কীবোর্ড।
.
-শুনেছি তুমি না কি গ্রাফিক্স শিখেছিলে? এসব করতে পারো। ওয়াইফাই তো আছেই৷ কোন হেল্প লাগলে বলো। আমি স্টাডি রুমে আছি।
.
সায়ান উঠে স্টাডি রুমে চলে যায়। অতসী ল্যাপটপ বুকে জড়িয়ে চুপচাপ বসে আছে কিভাবে করবে ওসব কাজ? ওসব কাজ যে শুধুই দিহান কে মনে করিয়ে দিবে৷ কারণ দিহানের হাতেই তো এসব শিখেছিলো সে।
.
.
সবে মাত্র ফযরের আজান দিয়েছে।
গায়ে চাদর জড়িয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে রাইমা। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দাগ বসে গেছে৷
নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করবে না কি অসহায়? আজ প্রথম দিহান ওর এতটা কাছে এসেছে। তবুও নেশার ঘোরে। বার বার অতসীর নাম বলছিলো সে।
যখন দিহান সেন্সে আসবে তখন কি মেনে নিবে রাইমা কে? না কি সব হারিয়ে যাবে। দিহান কে প্রমিস করেছে অতসী কে ফিরিয়ে দিবে।
.
না চাইতেই বিয়ের বন্ধনে আগেই দিহান কে বেধে রেখেছিলো সে এসব জানিয়ে আর মানুষটা কে কষ্ট দিবে না।হ্যাঁ! দিহানের নেশার সাথে সাথে কাল রাতের সব স্মৃতি শেষ করে দিবে রাইমা৷
.
.
চলবে
NEXT 😍
ReplyDelete